প্রকাশিত: ১:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২২
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
‘খেজুর গাছে চোমর বের হয়েছে তোরে এনে দেব, সন্ধ্যা রস ঝেড়ে এনে ঝাউ রেন্দে খাবো, ঠিলে ধুলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটতে যাব ”। বাংলার গ্রাম পল্লীতে এখনও এ লোককথা প্রচলিত শতবছর ধরে । শীত পুরোপুরি না নামলেও আগেভাগেই শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছ তোলা ও ঝোড়ার কাজ। শীতের আগমনী বার্তায় ঝিনাইদহের গাছিরা এখন মহা ব্যস্ত। আগামী ৪ মাস একনাগাড়ে চলবে এ কর্মযোগ্য । কোনভাবেই কেই কারো থেকে পিছিয়ে পড়তে নারাজ।
ঝিনাইদহ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৫ হাজার ৭শত ৫২ জন গাছি ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় গাছ কাটা শুরু করেছে ।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাকরি গ্রামের আব্দুল মজিদ । ৫০টি বছর ধরে খেজুরের গাছ কেটে বছরের অন্তত ৬মাস সংসার চালান । এবারও তিনি শুরু করেছেন ১০০ বেশি খেজুরের গাছ তোলার কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যাঅব্দি ছুটে চলেছেন এ গাছ থেকে অন্য গাছ কাটায়। নিয়মিতভাবে খেজুরের গাছের সংখ্যা কমলেও গ্রামের একমাত্র গাছী হিসেবে তার কদর কমেনি ।
তিনি জানান, ১০ ঠিলে রস থেকে এক ঠিলে গুড় হয়। একটি গাছ থেকে এক সিজনে প্রায় ১২০-১৪০ ঠিলে রস আহোরন সম্ভব । ভোরে যেমন রসের কদর আছে ঠিক তেমনি গুড়ের কদরও কম না । এক ঠিলে রস ১০ টাকা করে গ্লাস ধরলেও ১০০ টাকার উপর আয় হয় । অন্যদিকে এক কেজি নলেন গুড়ের দাম প্রায় ১২০-১৩০ টাকা । এখন বর্তমানে এক ঠিলে গুড় বিক্রি হয় হাজার বারোশ টাকায় । সংসারটা সময় ভালেই চলে ।
জানা যায়, তার মতোই গ্রামে গ্রামে চলছে গাছ কাটা বা গাছ তোলার ধুম। দা ধার দেওয়া, ঠিলে ও নলি তৈরি করা আরও কতো কি। হবেনা কেন? আগামী ৪টি মাস যে এ গাছগুলোই তাদের রুজি-রুটি ।
ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুরের গাছী আব্দুল কাদের জানান, গ্রাম বাংলার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক এ খাতে সরকারী কোন পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এ পেশা ।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ডিডি আজগর আলী জানান, মধু বৃক্ষ থেকে সংগ্রহ হবে সুমিষ্ট ও স্বাস্থ্যসম্মত এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খেজুর রস। তাতে তৈরি হয় নলেন গুড় ও পাটালী।
তিনি আরও জানান, এ বছর ১ লাখ ১৪ হাজার খেজুর গাছ কাটা হবে ঝিনাইদহে। জেলায় রস উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮শ লিটার । আর গুড় উৎপাদনের টার্গেট ৫৮১ মেঃটন । চিনি থেকে খেজুরের রস বা গুড় অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত ।